পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে রান্নাঘর ডট কম এর আজকের আয়োজন ট্র্যাডিশনাল কিছু ইফতারির আয়োজন। ইফতারিতে এই আইটেমগুলো না থাকলেই যেন নয়। তাহলে দেরি না করে দেখে নিন কিভাবে তৈরি করবেন রেসিপিগুলো।
ছোলা ভুনা
উপকরন
- সিদ্ধ ছোলা ৩ কাপ
- সিদ্ধ আলু বড় ১ টি
- পেঁয়াজ কুঁচি ১ কাপ
- দারচিনি ১ টুকরা, এলাচ ১ টি, তেজপাতা ১ টি
- শুকনা মরিচ + কাঁচা মরিচ ফালি ২+২ টি
- আদা বাটা ১ ১/২ চা চামচ
- রসুন বাটা ১ ১/২ চা চামচ
- লবন পরিমানমত
- মরিচ গুঁড়া ১/২ চা চামচ
- হলুদ গুঁড়া ১/২ চা চামচ
- জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ
- পানি ১ কাপ
- ধনিয়া পাতা ১/৪ কাপ
- তেল ১/৪ কাপ
নির্দেশনা
১। এক কাপ ছোলা সারারাত ভিজিয়ে রেখে দিন। পরে ছোলা ভালভাবে ধুয়ে পরিমানমত পানি দিয়ে সিদ্ধ করে নিন। ছোলা সিদ্ধ করার মাঝামাঝি সময়ে আলুও সিদ্ধ করে নিন।
২। ছোলা সিদ্ধ হয়ে গেলে ছোলার পানি ছেঁকে ছোলা ধুয়ে নিন। সিদ্ধ আলুও ছিলে নিন।
৩। এখন পাত্রে তেল গরম দিন। গরম তেলে পেঁয়াজ, শুকনা ও কাঁচা মরিচ এবং গরম মশলাগুলো দিন। পেঁয়াজ ভাঁজা ভাঁজা হয়ে গেলে সামান্য পানি দিয়ে আদা, রসুন, হলুদ, মরিচ, লবন এবং জিরা দিয়ে দিন। মশলা অল্প অল্প পানি দিয়ে বেশ সময় নিয়ে কষিয়ে নিন।
৪। পানি শুকিয়ে মশলার উপর তেল উঠে এলে এর মধ্যে সিদ্ধ আলু হাতে ভেঙে দিয়ে দিন। ভালকরে নেড়ে আলু একটু কষিয়ে নিয়ে এর মধ্যে সিদ্ধ ছোলাগুলো দিয়ে দিন।
৫। এবার সব একসাথে নেড়ে ছোলায় পানি দিয়ে দিন। এরপর সব নেড়ে ছোলা কিছুক্ষনের জন্য ঢেকে দিয়ে রান্না করুন। ছোলার পানি কমে আসা শুরু হলে ঘন ঘন নেড়ে দিন।
৬। ছোলার পানি টেনে ছোলা মাখা মাখা হয়ে এলে উপরে ধনিয়া পাতা ছড়িয়ে দিয়ে চুলা বন্ধ করে দিন। তৈরি মজাদার ছোলা ভুনা।
আলু ডালের পেঁয়াজু
উপকরন
- মটর ডাল ১ কাপ
- আলু ছোট ১ টি
- পেঁয়াজ কুঁচি ১ কাপ
- কাঁচা মরিচ মিহিকুঁচি ২ টেবিল চামচ
- আদা বাটা ১ ১/২ চা চামচ
- রসুন বাটা ১ ১/২ চা চামচ
- লবন পরিমানমত
- হলুদ গুঁড়া ১/২ চা চামচ
- জিরা গুঁড়া ১ ১/২ চা চামচ
- ধনিয়া পাতা কুঁচি ১/৪ কাপ
- তেল পরিমানমত (পেঁয়াজু ভাঁজার জন্য)
নির্দেশনা
১। ডাল সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ভালভাবে ধুয়ে পানি পুরোপুরি ঝরিয়ে ডাল বেটে নিন। আলু মিহি কুঁচি করে পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে দিন।
২। এখন আলুর পানি ভাল করে চিপে ফেলে দিন। একটি পাত্রে আলু কুঁচি, পেঁয়াজ, মরিচ, আদা, রসুন, লবন, হলুদ, জিরা এবং ধনিয়া পাতা হাতদিয়ে মেখে নরম করে এই মিশ্রণের সাথে বাটা ডাল মিশিয়ে নিন।
৩। পাত্রে তেল গরম দিন। তেল গরম হয়ে গেলে ডালের মিশ্রণ থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে হাতের সাহায্যে পাতলা করে তেলে দিতে থাকুন। এরপর পেঁয়াজু লাল লাল করে ভেঁজে প্লেটে তুলে নিয়ে পরিবেশন করুন।
নোটঃ
*** পেঁয়াজু সম্পর্কে অনেকেরই অভিযোগ থাকে পেঁয়াজু ভাঁজার পর মচমচে থাকেনা। দু তিনটি নিয়ম মেনে চললে পেঁয়াজু ভাঁজার অনেকসময় পরও মচমচে থাকবে। ***
*** পেঁয়াজুর ডাল বাটার সময় পানি থাকা যাবেনা। চেষ্টা করবেন পানি না দিয়ে ডাল বেটে নিতে। ডালে পানি থাকলে পেঁয়াজু সুন্দর হবেনা। ***
*** পেঁয়াজু তেলে ছাড়ার সময় হাতের সাহায্যে বেশ পাতলা করে দিবেন। তাহলে পেঁয়াজু ভালই মচমচে হবে। আর যদি পেঁয়াজু মোটা/ পুরু রেখে তেলে দেন তবে পেঁয়াজুর বাইরের দিক ভাঁজা হবে কিন্তু ভেতরটা নরম থাকবে। ***
*** তেল ভালোভাবে গরম হলেই পেঁয়াজু তেলে ছাড়বেন। তেল যদি ভালোভাবে গরম না হয় বা অতিরিক্ত গরম থাকে তাহলেও পেঁয়াজু ঠিকভাবে ভাঁজা হবেনা। ***
আলুর চপ
বেসনের ব্যাটারে আলুর চপ
উপকরন
- আলু মাঝারি ২ টি
- পেঁয়াজ বেরেস্তা ১/৪ কাপ
- ডিম ১ টি (ঝুরি করে ভেঁজে নেয়া)
- শুকনা মরিচ ২-৩ টি
- পাঁচফোঁড়ন গুঁড়া ১/৪ চা চামচ
- ধনিয়া পাতা কুঁচি ৩ টেবিল চামচ
- লবন স্বাদমত
বেসনের ব্যাটার তৈরিতে
- বেসন+চালের গুঁড়া মিলিয়ে ১/২ কাপ ( বেসন ৩ ভাগ বাকি ১ ভাগ চালের গুঁড়া)
- আদা বাটা ১/৪ চা চামচ
- রসুন বাটা ১/৪ চা চামচ
- লবন ১/৪ চা চামচ
- হলুদ গুঁড়া ১/৪ চা চামচ
- মরিচ গুঁড়া ১/৪ চা চামচ
- পানি পরিমানমত
তেল পরিমানমত (চপ ভাঁজার জন্য)
নির্দেশনা
১। বেসন, চালের গুঁড়া, আদা, রসুন, হলুদ, মরিচ এবং লবন একসাথে মিশিয়ে নিন। এখন এর সাথে অল্প অল্প পানি মিশিয়ে মোটামুটি ঘন ব্যাটার তৈরি করে নিন। ব্যাটার তৈরি হয়ে গেলে ঢেকে ২ ঘণ্টা রেখে দিন।
২। আলু সিদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে ভালকরে ম্যাস করে নিন।
৩। শুকনা মরিচ তেলে ভেঁজে নিন। এই ভাঁজা মরিচ লবন দিয়ে গুঁড়া করে নিন। এবার গুঁড়া করা মরিচের সাথে পেঁয়াজ বেরেস্তা, ঝুরি করে ভাঁজা ডিম, ধনিয়া পাতা এবং পাঁচফোঁড়ন গুঁড়া ভালকরে মিশিয়ে নিন।
৪। ম্যাস করা আলুর সাথে এই মিশ্রণ মেখে নিয়ে ছোট ছোট চপের আকারে গড়ে নিন।
৫। চুলায় তেল গরম দিন। তেল গরম হয়ে গেলে চপগুলো একটা একটা করে বেসনের ব্যাটারে ডুবিয়ে তেলে দিতে থাকুন। চপগুলোর দুপিঠ লালচে করে ভেঁজে প্লেটে তুলে রাখুন।
আলুর চপ (ব্রেডক্রাম কোটেড)
উপকরন
- আলু মাঝারি ২ টি
- পেঁয়াজ বেরেস্তা ১/৪ কাপ
- শুকনা মরিচ ২-৩ টি
- ধনিয়া পাতা কুঁচি ৩ টেবিল চামচ
- লবন স্বাদমত
কোটিং এর জন্য
- ডিম ১ টি
- ব্রেডক্রাম ১/২ কাপ
তেল পরিমানমত (চপ ভাঁজার জন্য)
নির্দেশনা
১। আলু সিদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে ভালকরে ম্যাস করে নিন।
২। শুকনা মরিচ তেলে ভেঁজে নিন। এই ভাঁজা মরিচ লবন দিয়ে গুঁড়া করে নিন। এবার গুঁড়া করা মরিচের সাথে পেঁয়াজ বেরেস্তা এবং ধনিয়া পাতা ভালকরে মিশিয়ে নিন।
৩। ম্যাস করা আলুর সাথে এই মিশ্রণ মেখে নিয়ে ছোট ছোট চপের আকারে গড়ে নিন।
৪। চপগুলো একে একে ফেটানো ডিমে ডুবিয়ে ব্রেডক্রামে গড়িয়ে নিন। ১০ মিনিটের জন্য চপগুলো ফ্রিজে রেখে তারপর তেলে ভেঁজে নিন। এরপর পরিবেশন করুন।
নোটঃ
*** আলু সিদ্ধ করে পুরোপুরি পানি শুকিয়ে নিবেন। আলুর ভিতর পানি থাকলে চপ ভাঁজার সময় খুলে যাবে। ***
*** আলু বেশি গরম থাকা অবস্থায় লবন মিশাবেন না। তাতে আলু ভেজা ভেজা হয়ে যাবে। আলু ঠাণ্ডা হলে তখন লবন, মরিচ, পেঁয়াজ মিশাবেন। ***
*** ভাঁজার সময় চপ বেশি নাড়াচাড়া না করে একপিঠ ভালোভাবে ভাঁজা হলে অন্যপিঠ উল্টাবেন। ***
বেগুনী
উপকরন
- বেগুন মাঝারি ১ টি
বেসনের ব্যাটার তৈরিতে
- বেসন+চালের গুঁড়া মিলিয়ে ১ কাপ ( বেসন ১ কাপের ৪ ভাগের ৩ ভাগ, বাকি ১ ভাগ চালের গুঁড়া)
- আদা বাটা ১/২ চা চামচ
- রসুন বাটা ১/২ চা চামচ
- লবন ১/২ চা চামচ
- হলুদ গুঁড়া ১/২ চা চামচ
- মরিচ গুঁড়া ১/২ চা চামচ
- পানি পরিমানমত
তেল পরিমানমত (বেগুনী ভাঁজার জন্য)
নির্দেশনা
১। বেসন, চালের গুঁড়া, আদা, রসুন, হলুদ, মরিচ এবং লবন একসাথে মিশিয়ে নিন। এখন এর সাথে অল্প অল্প পানি মিশিয়ে মোটামুটি ঘন গোলা তৈরি করে নিন। গোলা তৈরি হয়ে গেলে এই গোলা ঢেকে রেখে দিন ২ ঘণ্টা।
২। বেগুন পাতলা পাতলা করে কেটে সামান্য লবন হলুদ দিয়ে মেখে নিন।
৩। এবার চুলায় তেল গরম দিন। তেল গরম হয়ে গেলে বেগুনের পাতলা স্লাইসগুলো একটা একটা করে বেসনের গোলায় ডুবিয়ে তেলে দিতে থাকুন। বেগুনিগুলোর দুপিঠ লালচে করে ভেঁজে প্লেটে তুলে নিন। তৈরি মজাদার বেগুনি।
নোটঃ
*** বেসনের ব্যাটার তৈরি করার সময় বেসন এবং চালের গুঁড়া ৪ঃ১ অনুপাতে নিবেন, বেগুনি এমনিতেই ফুলকো হবে। তাহলে আর বেকিং পাউডার দেয়ার প্রয়োজনের হবেনা।***
*** বেসনের ব্যাটার বেশি পাতলা রাখবেননা। পাতলা রাখলে বেগুনি ফুলবেনা। ব্যাটারের কন্সিসটেন্সি এমন রাখবেন যাতে চামচে নিয়ে উপর থেকে ছাড়লে খুব দ্রুত পড়ে না যায়। ***
*** বেসনের ব্যাটারে বেগুন দেয়ার সময় খেয়াল রাখবেন বেগুনে যাতে এক্সট্রা পানি না থাকে। বেগুনে লবন মেখে রাখলে যে সামান্য পানি বের হয় তা ঝরিয়ে নিবেন। ***
*** তেল প্রপারলি গরম করে নিবেন। তেল ঠিকভাবে গরম না হলে বেগুনী বেশি তেল টানবে এবং ফুলবেনা। ***
পেঁয়াজু
উপকরন
- ডাল ১ কাপ (মটর/মসুর/খেসারি/ছোলা)
- পেঁয়াজ কুঁচি ১ কাপ
- কাঁচা মরিচ মিহিকুঁচি ২ টেবিল চামচ বা ঝাল অনুযায়ী
- আদা বাটা ১ ১/২ চা চামচ
- রসুন বাটা ১ ১/২ চা চামচ
- লবন পরিমানমত
- হলুদ গুঁড়া ১/২ চা চামচ
- জিরা গুঁড়া ১ ১/২ চা চামচ
- ধনিয়া পাতা কুঁচি ১/৪ কাপ
- তেল পরিমানমত (পেঁয়াজু ভাঁজার জন্য)
নির্দেশনা
১। ডাল সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ভালভাবে ধুয়ে পানি পুরোপুরি ঝরিয়ে ডাল বেটে নিন। (মসুর/খেসারি ডাল সারারাত ভিজানোর দরকার নেই, এই ডাল চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলেই হবে। মটর/ছোলার ডাল হলে সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে।)
২। একটি পাত্রে পেঁয়াজ, মরিচ, আদা, রসুন, লবন, হলুদ, জিরা এবং ধনিয়া পাতা হাতদিয়ে মেখে নরম করে নিন। এবার এই মিশ্রণের সাথে বাটা ডাল মিশিয়ে নিন।
৩। এখন আলাদা পাত্রে তেল গরম দিন। তেল গরম হয়ে গেলে ডালের মিশ্রণ থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে হাতের সাহায্যে পাতলা করে তেলে দিতে থাকুন। পেঁয়াজু লাল লাল করে ভেঁজে প্লেটে তুলে রাখুন। তৈরি মজাদার পেঁয়াজু।
নোটঃ
*** পেঁয়াজু সম্পর্কে অনেকেরই অভিযোগ থাকে পেঁয়াজু ভাঁজার পর মচমচে থাকেনা। দু তিনটি নিয়ম মেনে চললে পেঁয়াজু ভাঁজার অনেকসময় পরও মচমচে থাকবে। ***
*** পেঁয়াজুর ডাল বাটার সময় পানি থাকা যাবেনা। চেষ্টা করবেন যতটা সম্ভব পানি না দিয়ে ডাল বেটে নিতে। ডালে পানি থাকলে পেঁয়াজু সুন্দর হবেনা। ***
*** ডাল বেটে একেবারে মিহি পেস্ট করে ফেলবেননা। ডাল আধ বাটা রাখবেন তাহলে পেঁয়াজু সুন্দর মচমচে থাকবে। ***
*** পেঁয়াজু তেলে ছাড়ার সময় হাতের সাহায্যে বেশ পাতলা করে দিবেন। তাহলে পেঁয়াজু ভালই মচমচে হবে। আর যদি পেঁয়াজু মোটা/ পুরু রেখে তেলে দেন তবে পেঁয়াজুর বাইরের দিক ভাঁজা হবে কিন্তু ভেতরটা নরম থাকবে। ***
*** তেল ভালোভাবে গরম হলেই পেঁয়াজু তেলে ছাড়বেন। তেল যদি ভালোভাবে গরম না হয় বা অতিরিক্ত গরম থাকে তাহলেও পেঁয়াজু ঠিকভাবে ভাঁজা হবেনা। ***