প্রিয় রান্নাঘর পাঠক, রান্নাঘরের আজকের আয়োজনে রয়েছে হালুয়া, পরোটা ও লুচি। সকালের নাস্তায় ঝটপট তৈরি করে নিতে পারেন এই নাস্তাগুলো। তাহলে দেখে নিন কিভাবে তৈরি করবেন রেসিপিগুলো।
সুজির হালুয়া
উপকরন
- সুজি ১ কাপ
- ঘি ১/২ কাপ
- দারচিনি ২ টুকরা
- এলাচ ২ টি
- তেজপাতা ২ টি
- চিনি ১ কাপ
- কুসুম গরম পানি ২ কাপ
- কিসমিস ও বাদাম কুঁচি (ইচ্ছা)
নির্দেশনা
১। প্রথমে শুকনা ফ্রাইং প্যানে সুজি ভেঁজে নিন। চুলার আঁচ মাঝারি রেখে ১৫ মিনিট ধরে সুজি ভাজুন।এই ১৫ মিনিট সুজি সারাক্ষণ নাড়ুন না হলে সুজি সমানভাবে ভাজা হবেনা বা পুড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকবে।
২। দেখবেন আস্তে আস্তে সুজির রঙ পরিবর্তন হয়ে যাবে।
৩। এবার একেএকে গরম মসলাগুলো দিয়ে দিন। ঘি দিয়ে দিন। ঘি এবং সুজি অনবরত নাড়তে থাকুন আরও ১০ মিনিট ধরে। চুলার আঁচ মাঝারি থাকবে।
৪। এবার সুজির মধ্যে কুসুম গরম পানি পুরোটা দিয়ে দিন। এরপর এর মধ্যে চিনি দিয়ে ভালকরে নেড়ে নেড়ে সুজি রান্না করতে থাকুন।
৫। সুজির পানি শুকিয়ে প্যান থেকে ছেড়েছেড়ে আসলে চুলা থেকে নামিয়ে নিন।
৬। সবশেষে সুজির উপরে বাদাম কুঁচি এবং কিসমিস দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
**ঘি বেশি খেতে না চাইলে ঘি এবং তেল অর্ধেক অর্ধেক করে মিশিয়ে নিতে পারেন**
ফুলকো লুচি
উপকরন
- ময়দা ২ কাপ
- তেল ৪ টেবিল চামচ
- লবন ১ চা চামচ
- কুসুম গরম পানি ১/২ + ১/৪ কাপ
- তেল ২ কাপ (লুচি ভাজার জন্য)
নির্দেশনা
১। ময়দার সাথে লবন এবং তেল মিশিয়ে ভাল করে মেখে নিন। এবার ময়দার সাথে পানি মিশিয়ে মোটামুটি নরম খামির তৈরি করুন।
২। সব ময়দার শোষণ ক্ষমতা সমান থাকেনা এজন্য পানি দেবার সময় একটু একটু করে যোগ করবেন। একবারে সব দিয়ে দিবেননা।
৩। খামির তৈরি করে ভেজা টিস্যু/কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন ১ ঘণ্টা। ১ ঘণ্টা পর খামির থেকে পছন্দসই আকারে বল বানিয়ে নিন।
৪। এবার চুলায় তেল গরম হতে দিন। তেল গরম হয়ে গেলে লুচি বেলা শুরু করুন।
৫। লুচি বেলার সময় সামান্য তেল দিয়ে বেলুন। তেল দিয়ে বেললে লুচি সুন্দর হবে। চেষ্টা করবেন লুচির সব পাশ একই রকম পাতলা করে বেলার।
৬। লুচি একসাথে অনেকগুলো তেলে ছাড়বেননা। একটা একটা করে তেলে ভেজে নিবেন তাহলে লুচি সুন্দর ফুলবে। আর বেশি লাল করে ভাজবেন না। লুচি ফুলে উঠলেই লুচির আরেক পিঠ উলটে দিয়ে এরপর তেল থেকে ছেঁকে তুলে নিন।
৭। লুচি সব ভাজা হয়ে গেলে হালুয়া বা মাংস বা পছন্দসই যে কোন কিছুর সাথে পরিবেশন করুন।
বুটের ডালের হালুয়া
উপকরন
- বুটের ডাল ১ কাপ
- গুঁড়া দুধ ১ কাপ
- চিনি ১ কাপ বা স্বাদ অনুযায়ী কম বা বেশিও দেয়া যাবে
- লবন ১ চিমটি
- ঘি/তেল ১/২ কাপ+১ টেবিল চামচ
- এলাচ ২ টি
- দারুচিনি ২ টুকরা
- তেজপাতা ১ টি
- বাদাম কুঁচি ২ টেবিল চামচ
- কিসমিস ১ টেবিল চামচ
নির্দেশনা
১। প্রথমে ডাল ধুয়ে ১ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। এরপর পরিমানমত পানি দিয়ে ডাল সিদ্ধ করে পানি শুকিয়ে নিন।
২। গুঁড়া দুধে অল্প পানি মিশিয়ে নিন। এবার সিদ্ধ ডালে একটু একটু দুধ মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিন, পাটায়ও বেটে নিতে পারেন সে ক্ষেত্রে দুধ দেবার দরকার হবেনা দুধ একবারে হালুয়া তৈরির সময় দিলেই হবে।
৩। এখন ননস্টীক ফ্রাইং প্যানে ঘি/তেল গরম দিয়ে একে একে এলাচ , দারুচিনি , তেজপাতা দিয়ে দিন।
৪। এবার ডাল ও দুধ এর মিশ্রণ দিয়ে দিন। ঘন ঘন নাড়ুন যাতে নিচে পোড়া না লাগে। চুলার আঁচ মাঝারি রাখুন।
৫। এরপর চিনি দিয়ে দিন, এক চিমটি লবন দিন।বাদাম কুঁচি এবং কিসমিস দিন। নাড়তে নাড়তে এক পর্যায়ে হালুয়া যখন ঘন হয়ে প্যান থেকে ছেড়ে ছেড়ে আসবে তখন চুলা থেকে নামিয়ে নিন।
৬। যে প্লেট বা ট্রে তে হালুয়া ঢালবেন তাতে সামান্য ঘি মাখিয়ে নিন। এবার প্লেটে হালুয়া ঢেলে সমান করে বিছিয়ে পছন্দ মতো সাইজে কেটে নিন।
৭। উপরে বাদাম কুঁচি এবং কিসমিস দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
লেয়ার পরোটা
উপকরন
- ময়দা+আটা মিলিয়ে ৩ ১/২ কাপ
- ডিম ২ টি
- কুসুম গরম পানি ৩/৪ কাপ
- লবন ১ চা চামচ
- চিনি ১ টেবিল চামচ
- গুঁড়া দুধ ৪ টেবিল চামচ
- তেল ২ টেবিল চামচ
লেয়ারের জন্য
- তেল
- ময়দা
- ঘি/ তেল (পরোটা ভাঁজার জন্য)
নির্দেশনা
১। প্রথমে আটা এবং ময়দার সাথে ২ টেবিল চামচ তেল ভালকরে মিশিয়ে নিন। আলাদা পাত্রে ডিম, চিনি, গুঁড়া দুধ, লবন এবং পানি একসাথে মিশিয়ে নিন। এখন এই মিশ্রণে অল্প অল্প করে আটা ময়দা মিশিয়ে খামির তৈরি করে নিন। খামির একেবারে শক্ত হবেনা আবার নরমও হবেনা।
২। একবারে সব আটা ময়দা ডিমের মিশ্রণে দিয়ে দিবেননা। একটু একটু করে মিশাবেন। সব ময়দার পানি শোষণ ক্ষমতা সমান থাকেনা এ কারনে অনেক সময় আটা ময়দা কম বা বেশি লাগতে পারে এজন্য হাতে কিছু এক্সট্রা আটা ময়দা রাখবেন।
৩। খামির খুব ভালোভাবে সময় নিয়ে মথে নিন। খামির মথার উপরে পরোটার নরম হওয়া নির্ভর করে।
৪। খামির তৈরি হয়ে গেলে খামিরের উপর সামান্য তেল মেখে নিন। এখন খামির ২-৩ ঘণ্টার জন্য ঢেকে রেখে দিন।
৫। ২-৩ ঘণ্টা পর খামির ১২ ভাগ করে নিন। এখন একটি গোল্লা নিয়ে রুটি বেলার জায়গায় অল্প তেল মেখে নিয়ে পাতলা লম্বাটে রুটি তৈরি করে নিন। এবার রুটির উপর সামান্য তেল মেখে এর উপর অল্প ময়দা ছিটিয়ে দিয়ে রুটি রোল করে নিয়ে জিলাপির মত গোল করে মুড়িয়ে নিন।
৬। এভাবে সব তৈরি করে আধা ঘণ্টার জন্য ঢেকে রেখে দিন। আধা ঘণ্টা পর প্যান গরম দিয়ে পরোটা বেলা শুরু করুন। পরোটা পাতলা করে বেলে প্যানে সেঁকে নিন। চুলার আঁচ মাঝারি করে রাখুন। পরোটার দুই পাশ ছেঁকা হয়ে গেলে এর দুই পিঠে ১/২ চা চামচ করে তেল/ ঘি দিয়ে পরোটা ভেজে তুলে নিন। এভাবে সবগুলো পরোটা ভেজে নিন।
৭। যেহেতু এটা লেয়ার পরোটা এজন্য ভাঁজা শেষ হলে গরম অবস্থায় সবগুলো পরোটা সমান কিছুর উপর রেখে দুই হাত দিয়ে জোরে জোরে চেপে ভাঁজ ভেঙ্গে নিন।
৮। সবগুলো পরোটা ভাঁজা হলে পরোটাগুলো এয়ার টাইট বক্সে রেখে দিন তাহলে পরোটা অনেকক্ষণ নরম থাকবে।
নোট
*** পরোটা বেলার সময় সবসময় তেল দিয়ে বেলবেন। কখনো ময়দা দিয়ে বেলবেননা। বেলার সময় বেলার জায়গায় এবং বেলুনিতে হালকা তেল মেখে নিবেন। তেল দিয়ে বেললে পরোটা বেশ সুন্দর হয়। ***
*** পরোটা ভাঁজার সময় তেল দেয়ার পর পরোটার কিনারে খুন্তি দিয়ে হালকা চেপে চেপে ভাঁজবেন। প্রথমেই পরোটার মাঝখানে চেপে দিবেন না। ***